হুগলী জেলার হিন্দ মোটরের গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হলো ছট পুজো

জেলার খবর সংস্কৃতি হুগলী

বাঙালিদের যেমন ১২ মাসে ১৩ পার্বন। ঠিক সেরকমই একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বন হল ছট পূজা। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা যেমন গোটা ১ বছর অপেক্ষা করে থাকে দুর্গাপুজোর জন্য, ঠিক সেরকমই বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের হিন্দুরাও অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটার জন্য। সূর্যপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব প্রধানত পালিত হয় ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু জায়গায় দেখা যায় ছট পূজা করতে। সেরকমই একটি দৃশ্য দেখা গেলো হিন্দ মোটর- এর দোলতলা, বি.বি. স্ট্রিট, বটতলা গঙ্গার ঘাট সহ প্রায় সব কটি গঙ্গার ঘাটেই। যেখানে ছটী মা এর পুজো করার জন্য অজস্র মানুষের ভিড় দেখা যায়। যে সকল মানুষ পুজো করতে যায় তাদের সাথে ছিল তাদের পরিবারের মানুষ এবং তার সাথে বাজনা। বাজনা বাজিয়ে এবং ফল ফুল সহ ছটী মা এর আরাধনা করছে তারা। এরই মধ্যে আরও একটি ভয়ের সঙ্কেত, তারা করোনা কে উপেক্ষা করে কোনো প্রকার সাবধানতা অবলম্বন না করেই তাদের পুজো চালিয়ে যাচ্ছে। তারই সাথে রয়েছে হাইকোর্টের বিভিন্ন নির্দেশ জলদূষণ নিয়ে। কিন্তু তারই মধ্যে দিয়ে হিন্দ মোটরে চলছে ছট পুজোর আয়োজন। প্রসঙ্গত
হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত প্রাচীন হিন্দু পার্বণই হল ছট, পরবর্তীতে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে।ছট পূজা সূর্য্য ও তার পত্নী ঊষার প্রতি সমর্পিত হয়, যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে মূলত কোন মূর্তি পূজা করা হয় না।
ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী নামের অপভ্রংশ। মূলত সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার দরুণ একে ছট বলা হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি পালনের পর এই চার দিনের ব্রতের সবচেয়ে কঠিন ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত্রি হল কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী; বিক্রম সংবতের কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত উদযাপিত হওয়ার কারণে এর নাম ছট রাখা হয়েছে।এই পূজার কখন উৎপত্তি হয়েছিল তার কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু পৌরাণিক আখ্যানে ছট পূজার নীতি নিয়মের সঙ্গে মিল থাকা উৎসব দেখা যায়। ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে। ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে গ্রীক, রোমান, মিশরীয় ইত্যাদির সভ্যতাসমূহেও সূর্য্য মূখ্য দেবতা ছিলেন। সেভাবে ঊষাও বৈদিক দেবী। বেদে উল্লেখ থাকা মতে, তিনি হলেন পূর্বের দেবী এবং অশ্বিনীকুমারদের মাতা। অগ্নি, সোম এবং ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা সকলের পরে তিনি হলেন অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈদিক দেবী। রাত্রি হল তার ভগ্নী যাকে হয়তো পরে পৌরাণিক যুগে সন্ধ্যা এবং ছায়ারূপে কল্পিত করা হয়েছে। রামায়ণে উল্লেখ থাকা মতে, রামের কুলদেবতা সূর্য্যের জন্য রাম এবং সীতা এই পূজা করেছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *